একটা আনন্দের ছায়া হয়ে
একটা বেদনা এগিয়ে যাচ্ছে
ফুলগাছটির দিকে—
কখন ধীর পায়ে সন্ধ্যা আসবে
সেইসব ঝরে যাওয়া বুকে নিয়ে
আকাশে ছড়িয়ে যাবে ভ্যানগগের লাল
বিচ্ছুরণ বিগত মূহুর্তের স্মরণে—
আমরা আরো যাই
শূন্যতার উল্টো দিকে
যেখানে সত্যিই কথা ছিল
অনেক আনন্দ পাবার—
অথচ ঘড়ির কাটা থেকে
কেবলই ফুল ঝরে যাচ্ছে!
বিকেল-আকাশে উড়ছিলো সেই প্রজাপতি
এই রাতের সামিয়ানায় কোথায় কে জানে!
ভয় হয়, পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে আনন্দ—
প্রজাপতির ডানার রঙে কেবলই ধূসরতা—
নদীর চোখের কান্না
লুকিয়ে রয় তোমার বুকের স্পন্দনে!
তাই দিব্যি দিয়ে বলছি নিসঙ্গতার;
এইসব 'ভালো না-লাগার বনে'
একটা প্রজাতির হারিয়ে যাওয়ায়
কোনো কোনো পাতার সবুজকেও
মৃত মনে হয়!
হয়তো আমি তোমাকে ভুলে যাচ্ছি
বয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝখানে
হয়তো তখনো পাশাপাশি বসে আছি
এ এক অনিঃশেষ অতৃপ্তি- একে একে সব ফুল
ঝরে যাবার পর তবু একটি অন্তিম মাধবীললতার ঘ্রাণে
মৃত্যুর আঙুল ধরে উচ্চারণ করে- জীবন সুন্দর!
সেখানে তোমাকে দেখি- অজস্র
পাতার বনে ঢেউ খেলে একা
সন্ধ্যা- তোমার জন্ম শহরের পথটিতে
বিপন্নতা নেমে আসে- দাঁড়িয়ে থাকো-
পথ চলো- কোথায় যাও! বন্দর ছেড়ে
জাহাজেরা চলে যায় স্মৃতি পার হয়ে-
যেখানে দূরের গ্রাম ঝাপসা হয়ে আসে
আর তোমার ছায়া জড়িয়ে থাকে
এইসব দৃশ্যেরও অনেক গভীরে!
একই সাথে ঝাপ দিচ্ছে
ঝুলন্ত সাঁকো থেকে—
নিচে অনন্ত স্রোতধারায়
ভেসে যাওয়া সময়ে
সমস্ত পুণ্যতিথি
একে একে মুছে গেলে
কাতর সন্ধ্যার মেলোড্রামায়
বাজতে থাকে একটা অন্ধ রেডিও
আকাশ ভুলে যাওয়া পাখির
সমাধিতে—
গন্ধমাখা একখানি রোদ জারুল জারুল কান্নাচেপে
আঙুলেরা জেনে ছিল আকাশ ভরা মেঘের মানে
বলতে মানা, তাই বলে না, একটা পাখি বোবার ভানে
আকাশে মেঘ-রোদ চলে যায় সন্ধ্যা হলে ফিরবে কোথায়
পাখিটা তাই ফিরতে গিয়েও যাচ্ছে দূরে অন্য কোথাও
একটি বাড়ির উঠোনে তার হঠাৎ করে চোখ গেথে যায়
সন্ধ্যা প্রদীপ আজো জ্বলে মায়ের হাতে তুলসী তলায়
নাগকেশরের ভালোবাসা কুসুম কুসুম পাখির ডানায়
উড়ছে কেবল উড়ছে পাখি ক্লান্ত বুকে থামার আশায়
এই যে দূরত্ব নক্ষত্রের চোখে
এখানে নিকেল ধুলোয় ঢেকে থাকে সব
নদীর শরীরে ভেসে যাওয়া ফুলে
ভ্রমরের আয়ু ধুয়ে যায় যে নীরব
মৃত্যুমোহ যেভাবে ইশারায় ভাসে
মানুষের ভালোবাসা রক্তে পরমাণু
একসাথে জেগে থাকে বিদ্বেষের পাশে
জলের শরীরের কাঁদে জল নিশ্চুপ
নক্ষত্রের নির্জন আয়ু কেটে যায়
দীর্ঘ বিচ্ছেদে ভরা ঘুমের অসুখ
এমন সময় আসে মাঝে মাঝে—সূর্য নিভে যায়
তবু মাথার ওপরে এরোপ্লেন ঘোরে
ফালগুনে পৃথিবীর স্নায়ুর গভীরে অন্য এক
অন্ধকার নামে।
ভাবছি, যারা কাছে ছিল, দূরে চলে গেছে আজ
তারা কি প্রকৃতই কাছে ছিল কোনোদিন!
নিঃসঙ্গতা জমে থাকে—
এর অধিক কেউ কোনোদিন
সূর্য জ্বলার কথা বলেনি কখনো
পৃথিবীর প্রিয় ফালগুনে ।
মনে হওয়াটাই কবিতা, বাদবাকি গ্রাম ঝাপসা অবয়ব।
সময়ের স্বরে যে গল্প শোনা যায়,
সেইসব তুমি-আমি বলি।
দূর থেকে দেখি, মনে করি,
আকাশে কোনো নক্ষত্র নেই, তখন আকাশ শূন্য—
শূন্য বৃত্তে ধীরে ধীরে কী একটা স্পষ্ট হতে থাকে !
তারপর আবার নক্ষত্রের জন্ম হয়;
জন্ম হয় প্রত্যাশা,ব্যর্থতা,যন্ত্রণা, ক্ষোভ—
এমনতো হবার কথা নয়—
দূর থেকে দেখে তাই যে কোনো দৃশ্যকেই
কবিতা মনে হয় ! মনে হতে পারে—
নদীর শরীরে কান্না, কান্না জমে জমে পাথর
এবং পাথরের বুকে কবিতা জ্বলে ওঠে—
যাকে দূর থেকে দেখে আগুন মনে হয়!
একে একে কেটে যাচ্ছে দৃশ্য—
কোনো এক বননীল
রৌদ্রের কথা ভেবে ভেবে
এখানে জীবনায়ন এখনও এমনই হয়ে থাকে।
কিছু না-করার মতো হিমস্রোতে
ভেসে যায়
রাতরুপালি আলোর জোয়ারে—
আর এই যে অন্ধকারে মিশে থাকা আয়ু
ক্রমশ ধুয়ে যায় দীর্ঘ একার পথে
সমাহিত জলে…
0 comments:
Post a Comment