Friday, June 7, 2019
ভাবাধিনায়ক
তোমার উৎফুল্ল হরতনের
রাগরক্তিম ব্যঞ্জনা এসে লাগে আমার সাজানো তাসে।
কী ভাব জাগালে ওহে
ভাবাধিনায়ক,
আকাশে বাতাসে আর
আমাদের প্রথাসিদ্ধ তাসের সংসারে!
ফুটে ওঠে লজ্জারং, জেগে ওঠে রংধনুরূপ, ব্যাকুল তাসের সেটে।
হে ভাবের কম্যান্ডার, বোঝা ভার এ হরতনি লীলাটি তোমার।
রক্ত-প্রভা-ফুটে-ওঠা
স্পন্দমান তাসকেই করেছ হে তুরুপের তাস--
অব্যর্থ, মোক্ষম।
পুনরায় টেক্কা মেরে
দিয়েছ ঘায়েল করে সব উপশম, একদম।
প্রশান্তি
যখনই বাসায় আসে মায়ের
পুরনো সেই প্রেমিক, শিশুটি
বোঝে--
এ নিঃসীম নরকসংসারে
ওই স্নিগ্ধ
সম্পর্কটুকুই যেন একপশলা মায়াবী শুশ্রূষা,
তার চিরবিষণ্ন
মায়ের।
একখণ্ড নিরিবিলি রঙিন
সুগন্ধদ্বীপ
মায়ের এ রং-জ্বলা
নিষ্করুণ নিজস্ব ভুবনে।
স্রেফ, স্রেফ কিছুটা সময় হাসিখুশি দেখবে
মাকে, শিশু তাই দ্রুত গিয়ে
সিডিতে চালিয়ে দেয় সেই
গান,
যে-গান গেয়ে ওঠে
চিরন্তন প্রেমিক-প্রেমিকা
চাঁদনি রাতে, প্রশান্ত নদীতে, দু-পা মেলে দিয়ে, ছইয়ের ওপরে।
এইসব ছোট-ছোট প্রসন্ন
মুহূর্ত, মধুক্ষণ
ধীরে ধীরে গিয়ে গেঁথে
যায় এক বিষণ্নবিপুল মহাকালে।
সার্থক হয় মায়ের প্রণয়, মর্মী সন্তানের সহযোগ পেলে।
প্রদক্ষিণ
শূন্য আর এক, এক আর শূন্য--
অবিরাম এই একেশ্বর আর
নিরীশ্বরে যেন পালাক্রমিক বিশ্বাস,
মাত্র দুই অঙ্কের এই
মাধব-মাধবী জলকেলি, বোঝাপড়া,
নর্মলীলা...
স্রেফ এই দ্বিবীজ
বিশ্বাসে, এই দ্বিরাঙ্কিক
বিন্যাসেই
দ্রুত গড়ে উঠেছে
সংকেতবদ্ধ এক
পরাক্রমী ডিজিটাল সিস্টেম, প্রবুদ্ধ অঙ্কতন্ত্র।
তামাম দুনিয়া জুড়ে
বিছানো এ মহাকায় আন্তর্জাল, এ
উপাত্তমণ্ডলের মেঘ
সবকিছু ছিঁড়ে-ফুঁড়ে
ঠিকরে পড়ছে আজ
স্পষ্ট, আর কারো নয়, কেবল তোমারই স্মিত মুখের কিরণ।
তোমার পশ্চিমে
প্রসন্নতা, উত্তরে
প্রতিভাপ্রসাদ, দক্ষিণে লাবণ্যশ্রী,
নৈর্ঋতে স্নেহসংকেত, ঈশানে বাৎসল্যবলয়, পূর্বে মেধাসরোবর...
তোমার হিরণ্যসম কিরণের
কসম, তোমাকে কেন্দ্র
করে অচিরেই
ঊর্ধ্বশ্বাসে
প্রদক্ষিণ করতে থাকব আমি, আমরা
আর আন্তর্জালের উদ্বেল
পুঞ্জমেঘ।
পূর্বাভাস
যখনই যেখানে দেখা হয়ে
যায় অতর্কিতে তোমার-আমার,
তাকাও আড়চোখে--দ্রুত, চোরাগোপ্তা, এবং ধারালো।
আর তাকিয়েছ যতবার,
ততবারই ছুটে গেছে একটি
করে স্পন্দন, দুস্থ
হৃৎপিণ্ডের আমার।
এভাবেই, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই, দ্রুত কমে আসে হৃৎস্পন্দ
দেখা দেয় নিম্নচাপ, ঘন-ঘন পূর্বাভাস--কুলকীর্র্তিনাশা
জলোচ্ছ্বাস...
ক্রমেই উত্তাল হয়
ভূমধ্যসাগর
অচিরেই ভেসে যায়
যা-কিছু স্থাবর, অস্থাবর।
আগুন
জ্বলিনী, জ্বালিনী--দুই রূপ আগুনের।
তা দেখতে ফিরে ফিরে
আসে যত চোরাই মোমবাতি
কী-এক নিষিদ্ধ আবগারি
উন্মাদনা নিয়ে
মন-নাজুক-করা বাউরি
বাতাসের দিনে
অসংখ্য উড়ন্ত
চোরপতঙ্গের ভিড় ঠেলে ঠেলে।
চিরকুট
বাতাসে ভাসিয়ে
দিয়েছিলে চিরকুট
না-জানি-সে কতকাল আগে!
কত দেশ, কত ঋতু, কত
বিচিত্র বাতাস!
মন্থর, ব্যাকুল, বাউরি,
ঝোড়ো, হু-হু, হিমেল,
মৌসুমি...
একে একে সব রকম বাতাসে
ভর করে,
বহু দেশ ঘুরে-ফিরে
শেষে
আমারই সামনে দিয়ে যেই
ভেসে যাচ্ছিল তোমার
সেই হস্তলিপি, অমনি ধরে ফেলেছি তা হালকা
হস্তক্ষেপে।
দেশ থেকে দেশে অবিরাম
ভেসে চলবার কোনো এক ফাঁকে
মিদাসের মৃদু স্পর্শ
বোধহয় পেয়েছিল তোমার পাঠানো
সে-চিরকুটের আঁকাবাঁকা
অক্ষরস্রোত।
তাই তো সে-স্রোত যেন
কীরকম সোনালি-সোনালি!
পশ্চিমের আকাশটা আজ
হৈম, সুবর্ণসংকাশ।
যোগিনী ও
মাছরাঙা পাখি
যোগিনী, কী যোগ করলে তবে এ-সন্ন্যাসে,
এই অবিবাহে, এই অসংসারে?
নিরঙ্কুশ এ-ঘনসংশয়ে?
আর ওহে রঙ্গনের ঝোপে
বসে-থাকা মীনরঙ্গ পাখি, তোকেও
তো বলি,
এ ঊর্মিকুমার ঘাটে
প্রতিদিন আসে কত
রূপস্বিনী রজকিনী
বউমাছ বসন্তকুমারী--
প্রগলভা রঙিলা আর
বিলোল ব্যাপিকা কত চঞ্চলা শঙ্খিনী
এতসব ছেড়ে কেন যে
জ্বালাস শুধু তাকে,
শান্তশুভ্রা ওই
যোগিনীকে!
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment