"গৌতম চৌধুরীর কবিতা কখনো সরলরেখায় পথ চলেনি ।
তাঁর লীলার বহু রূপ । একেক কাব্যগ্রন্থে তাঁর একেক বিভঙ্গ । নানা চড়াই-উৎরাই, কুহেলিকাভরা
বিচিত্র বিসর্পিল পথ পেরিয়ে এসেছে সে ... (তাঁর) কবিতা মানুষের অন্তহীন
যাত্রার এক মর্মলিপি"
--- সাজ্জাদ শরিফ
জন্ম: ১৮ ফাল্গুন ১৩৫৮, ২ মার্চ ১৯৫২। জন্মস্থান:
কানপুর, উত্তর প্রদেশ, ভারত। গৌতম চৌধুরী প্রসঙ্গে সম্পাদকীয় কলম হাতে নিয়ে বসলে
ডেভিড লেটারম্যনের অনুষ্ঠানের নামটি শুধু মনে আসা সম্ভব...... "My Next Guest
Needs No Introduction" ... প্রকাশ্য মঞ্চে 'কবি'র সংজ্ঞা নির্ধারণে শ্রী
চৌধুরী যখন বলেন 'উদ্ভ্রান্ত এমন এক মানুষ যিনি অনিশ্চিত পথ ধরে অসহায়ভাবে খুঁজে
চলেছেন' তাঁর জীবনকবিতা প্রসঙ্গে তাঁর সৃষ্টিরাই যে শেষ কথা বলার একমাত্র দাবিদার
এ বিষয়ে তখন আর সন্দেহ থাকেনা , সঙ্গে এও স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রতিটি কাব্যগ্রন্থে
ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকের পত্তনের সচেতন কাব্যচেতনার পরীক্ষার মধ্যে নিহিত রয়েছে তাঁর
জীবনকে অন্বেষনের নিয়তি নির্ধারিত ক্ষমতা । তাঁর বিনয়ী পরিবেশনে যা 'বইপত্তর'
আমাদের কাছে তা কাব্যগ্রন্থসূচি । সম্পূর্ণ তালিকাটিকেই যদি একবার পড়া যায় , বাংলা
কবিতার জগতে গৌতম চৌধুরী নামের নিজস্ব institution টি প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্যের
নিরিখে নীরবতাই আত্মরক্ষার একমাত্র উপায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হয় ।
কাব্যগ্রন্থ:
কলম্বাসের জাহাজ [প্রথম প্রকাশ: ১৯৭৭, দ্বিতীয় সংস্করণ: রাবণ, কলকাতা, ২০১৬],
হননমেরু [উলুখড়, হাওড়া, ১৯৮০], পৌত্তলিক [উলুখড়, হাওড়া, ১৯৮৩], অমর সার্কাস
[আপেক্ষিক, হাওড়া, ১৯৮৯], চক্রব্যূহ [আপেক্ষিক, হাওড়া, ১৯৯১], নদীকথা [যুক্তাক্ষর,
হাওড়া, ১৯৯৭], আমি আলো অন্ধকার [অফবিট, কলকাতা, ১৯৯৯], সাঁঝের আটচালা [কীর্তিনাশা,
কলকাতা, ২০০২], আধপোড়া ইতিহাস [কীর্তিনাশা, পুরুলিয়া, ২০০৪],
অক্ষরশরীরে মহামাত্রা পাব বলে [কীর্তিনাশা, পুরুলিয়া, ২০০৬], আখেরি তামাশা [ছোঁয়া,
কলকাতা, ২০১৩], ঐতরেয় [রূপকথা, ক্যানিং, ২০১৩], উজানি কবিতা [মনফকিরা, কলকাতা,
২০১৪], ধ্যানী ও রঙ্গিলা [চৈতন্য, সিলেট, ২০১৫], বনপর্ব [সংবেদ, ঢাকা, ২০১৬], কে
বলে ঈশ্বর গুপ্ত? [ধানসিড়ি, কলকাতা, ২০১৬], বাক্যের সামান্য মায়া [ভাষালিপি,
কলকাতা, ২০১৭], রাক্ষসের গান [চৈতন্য, সিলেট, ২০১৭], ইতস্তত কয়েক কদম [কাগজের
ঠোঙা, কলকাতা, ২০১৮], বাজিকর আর চাঁদবেণে [পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., ঢাকা, ২০১৮]।
গদ্যগ্রন্থ:
গরুর রচনা [বইয়ের দোকান, ঢাকা, ২০১২ (ই-বুক)], খেয়া: এক রহস্যময় বিপরীতবিহারের
ঝটিকালিপি [কুবোপাখি, কলকাতা, ২০১৭], বহুবচন, একবচন [বইতরণী, কলকাতা, ২০১৮],
সময়পরিধি ছুঁয়ে [ঐহিক, কলকাতা, ২০১৮], অবাক আলোর লিপি [অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি
প্রেস, দিল্লি, ২০১৯]।
কবিতাসঙ্কলন: নির্বাচিত কবিতা [সংবেদ, ঢাকা, ২০১০]
কবিতাসংগ্রহ: [প্রথম খণ্ড, রাবণ, কলকাতা, ২০১৭]।
নাটক: হননমেরু [মঞ্চায়ন: ১৯৮৬]।
অনুবাদ: আষাঢ়ের এক দিন [মোহন রাকেশের হিন্দি নাটক, শূদ্রক নাট্যপত্র, ১৯৮৪]।
সম্পাদিত ছোটকাগজ (একক / যৌথ): অভিমান [১৯৭৪-১৯৯০], যুক্তাক্ষর, কীর্তিনাশা।
এর পরেও যদি
'কবিতা' শ্রী চৌধুরীর কাছে ঠিক কি,এই প্রশ্ন জাগে,তার জন্যে রইলো 'বাক'-এর জন্য
লিখে দেওয়া গৌতম চৌধুরীর "কবিতা ভাবনা" নামের পরমাণু প্রবন্ধটি ।
"কবিতা ভাবনা"
এতদিন ধরিয়া কবিতাবিষয়ক একটি ভাবনা যদি ভাবিয়া রাখিতে পারিতাম, তবে বেশ হইত। সেই
ভাবনাটি খসখস করিয়া কাগজে টুকিয়া দেওয়ালে ঝুলাইয়া দিলেই কাজ খতম। শিরোনাম দিতাম –
আমার কবিতা সনদ। সনদটি আর কাহারও কোনও দরকারে লাগুক না-লাগুক, আমার নিজের দিব্য
কাজে আসিত। আমাদের ছোটকালে যেমন দোয়াতে কলম চুবাইয়া লিখিবার রেওয়াজ ছিল, তেমনই
নতুন কবিতা লিখিবার আগে একবার করিয়া ওই সনদে চোখ বুলাইয়া লইলেই হইত। কিন্তু এই
সুবন্দোবস্তে কবিতা স্বয়ং বাদ সাধিয়া বসিয়া আছেন।
অবশ্য কবিতা বেকসুর, আমার
স্বভাবের গড়নটিই এ-বাবদে দায়ী। কবিতায় মজিয়া থাকার দিনগুলি হইতে নিশ্চেষ্টতায় লাট
খাইবার দিনগুলির ছায়াই এ-জীবনে দীর্ঘতর। মাঝের লম্বা লম্বা মরু-অঞ্চলসমূহ পার হইয়া
যদিবা কখনও কোনও কৃষিজমি খুঁজিয়া পাই, তখন আগের জ্ঞানগম্যি দাঁড়ি-দড়ি সবই বেবহাল।
দেখি, আমি মানুষটাই বদলাইয়া গেছি। তাই আমার প্রকাশের ধরনও বারবার বদলাইয়া যায়।
উলটাভাবে বলা যায়, আমি যদি না-বদলাই তাহা হইলে আর নতুন কিছু লিখিতেই পারি না।
দেখা যাইতেছে, আমি স্বভাবতই
কোনও একনিষ্ঠ সাধক নই। একনিষ্ঠরা সারা জীবনের সাধনায় একটি নিবিড় দ্বীপ রচনা করেন।
আমার স্বভাব পতঙ্গের। পতঙ্গের এক দশা ফড়িংয়ের তো অপর দশা পঙ্খির। আমার মন ঘাসের ডাঁটিতে ডাঁটিতে ঘুরিয়া বেড়ায়। তাকতে
কুলাইলে ডানায় ভর দিয়া চলিয়া যায় দ্বীপ হইতে দ্বীপান্তরে। পতঙ্গের আরেক রূপও অবশ্য
আছে। তাহা ঘুড়ি। দেদার উড়িতে উড়িতে যাহা আচানক ভোকাট্টা হইয়া বেহদিশ ভাসিয়া যাইতে
পারে। তখন তাহার পিছু পিছু বালকদৌড়ও খেলার একটি অংশ।
তাহা হইলে কি কবিতা লিখার
চেষ্টা আমার কাছে একটি খেলা! খেলা হইলেই বা সমস্যা কী? খেলা কি কোনও খেলো ব্যাপার?
তাহারও কড়া কড়া সব নিয়মকানুন আছে। বেনিয়মের জবরদস্ত শাস্তি আছে। তবে কি অত সব
কঠোরতার চাপে পড়িয়াই ঠাকুর বলিয়াছিলেন – নয় নয় এ মধুর খেলা! কথা সত্য। এ-খেলা যে
সর্বস্ব বাজি রাখিবার খেলা। শেষ রক্তবিন্দু অবধি নিঙড়াইয়া দিবার খেলা। নিজেকে
পুরাদস্তুর উন্মূল করিয়া দিতে পারিলেই এ-খেলায় আনন্দ। কিন্তু এত কিছুর পরও যে
সবটাই পণ্ডশ্রম হইবে না, তাহার কোনও কড়ার নাই।
কী করিলে যে কবিতা হইয়া উঠিবে
তাহার মালমশলার মাপজোকের হুঁশ কোনও মহাজন কাহাকেও গুলাইয়া খাওয়াইয়া দিতে পারেন না।
হইলে হইল, না-হইলে নয়। হইলে, হৃদয়ে একটি ঢেউ উঠিবে মাত্র। ঝরিয়া পড়িবে এক ফোঁটা
আনন্দাশ্রু। ব্যাস, আনন্দ বরাদ্দ ওই এক লহমার জন্য। তাহার পর আবার যে কে সেই। আবার বিচ্ছেদের কামড়। তাহার চাপা আগুনে ভিতরে ভিতরে
পুড়িতে থাকা। এ এক অনন্ত বিরহের অনুভূতি। সেই বিরহের ভার বহন করিবার শক্তি অর্জন
করিতে করিতেই জীবন কাটিয়া গেল।
কাজেই কাহাকেও কোনও পরামর্শ
দিবার এলেম আমার নাই। বিশেষত তরুণ কবিদের। কারণ আমি নিজেকেই এখনও তরুণ কবি ভাবিতে
চাই। আর কান পাতিয়া পড়ি রিলকের সেই অমোঘ উপদেশ –‘রাত্রির নিবিড়তম প্রহরে নিজের
কাছে কবুল করো, যদি লেখালিখি হইতে তোমাকে প্রত্যাহত করা হয়, মৃত্যু হইবে কি তোমার।
আর, নিজের অন্তস্তলের শিকড়গুলি যেখানে ছড়াইয়া আছে, সেই গভীরে ঝুঁকিয়া পড়িয়া
উত্তরটি খোঁজ। আর নিজেকে জিজ্ঞাসা করো আবার, আমাকে কি লিখিতেই হইবে?’ আর একটি
প্রশ্নও আমাকে খানিক ইস্তিরি করে। সেটি তুলিয়াছিলেন মণীন্দ্র গুপ্ত – ‘কোনটা চান
আপনি? একজন জীবিত কবির প্রেত হতে, না কি মরণের পরে কবিদেহে পুনরুত্থিত হতে?’এ বড়
শক্ত প্রশ্ন বটে ........."
কবি
যে-
চুল্লি নিজেকে খায় তার গর্ভে প্রথম অঞ্জলি
দিয়েছিল
যে- চণ্ডাল নক্ষত্রের ঢেউ ভেঙে ভেঙে
নিজের
নাভির কুণ্ড চিতা থেকে তুলে নিল সে- ই
মেশাল
নদীর গানে , যা কেবল গড়ে উঠতে চায়
** এই শ্বাসরোধী সৌন্দর্য হইতে আজ মুক্তি চায় বাক্য
ভয় এক
সংস্কার, নহিলে নক্ষত্রমণ্ডলই যথেষ্ট শুশ্রূষা, দ্বীপপুঞ্জের অগ্নিকুণ্ডগুলি
এখনও আধো-জাগরূক, থাকিয়া থাকিয়াই উগরাইয়া দেয়
লাভা, ছাই আর
ধোঁয়ায় ঢাকিয়া যায় আকাশ, অন্ধত্ব আরও সাধনার বিষয়,
আরও ক্রন্দনের
দুই চোখ ঠাসিয়া-ধরা ভাঁজ হইতে উঠিয়া আসে লবণের
ঘ্রাণ, ঝড়ের শব্দ
যাহা শুনা যায় না অথচ বহমান, টিক টক টিক টক
লাফাইয়া চলিয়াছে রক্ত
তবু ঘড়ির কাঁটার কোনও প্রভু নাই, সময় এক কাল্পনিক
ধারণামাত্র, সকল
কল্পনা ধারণ করিয়া রাখিয়াছে তুচ্ছ এই শরীর, যেখানে
কেবলই বিদ্যুতের
মৃত্যু, কেবলই সকল শৃঙ্খল উধাও, লম্বা লম্বা নলে
ফুৎকার দিয়া নানারকম
ধ্বনি বার করিতেছে মুণ্ডিত-মাথার বালকেরা, পদ্ম আর
বজ্রের রহস্য
বুঝিবার
জন্য তাহাদের এত প্রণিপাত
…
লম্বা
পথ আঁকিয়া বাঁকিয়া কখনও নামিয়া গিয়াছে জলে,
কণামাত্র ঘ্রাণে ভর
করিয়া আগাইয়া যায় মহাপ্রাণী, উফ্ কী বিমূর্ত, তবু কী নির্ভুল! একটি সামান্য
ফুলের ভিতর দিয়া কোন্ বার্তা আসে? ফুল নয় হে, ফুলের সেই আদিম গন্ধের
কথা বলা হইতেছে, পাখি নয়, বলা হইতেছে পাখির পালকের কথা, কোনও
কোনও মৃত্যু যে পাখির পালক হইতেও হালকা, সেই কথা, চাঁদ নয়, বলা বলা
হইতেছে
তাহার এবড়ো খেবড়ো চামড়ার কথা, গভীর ভয়াবহ সব গহ্বরের কথা
কথার কোনও মূল্য নাই, কথার ভিতরেই তবু পাহাড়ে-ঘেরা আরাফাত ময়দান
কথার ভিতরেই নৈমিষারণ্য, বারণাবতের চুল্লি, নিষাদ রমণী আর তাহার পাঁচ
ছেলে ঘুমাইয়া কাদা, ঘুমের আগুনে জ্বলিয়া উঠিল ঘর
…
সত্য
কি ওইটুকু জায়গায় লুকানো থাকে, না কি তাহা মায়া? মায়া কি ওইটুকু
জায়গায় বন্দি থাকে, না কি তাহা কল্পনা? কল্পনাই, তাহার লিপিগুলি ওই যে
পড়িয়া আছে ইতস্তত, শুকনো মড়মড়ে কাগজ কয়েক খণ্ড, গ্রীষ্মবাতাসের ধুলায়
যাহা উড়িয়া যাইবে দিগন্তের আড়ালে, তবু সভ্যতাকে এতদূর পর্যন্ত লইয়া আসিল
কে, ওই বন্য কুসুমটুকু যদি না রহিত? বাকিটা তো শুধুই রক্তপাত আর রিরংসার
কাহিনি, শুধু লুণ্ঠন আর জবরদখলের কাহিনি, সভ্যতার পক্ষ হইতে তাহাকে একটি
গার্ড অব অনার দেওয়া যাক তাহা হইলে, কিন্তু কোনও বন্দুকের শব্দ নয়, শুধু
কুচকাওয়াজ আর অভিবাদন, তাহাও মনে মনে, একা, সকল প্রণামের ভাষাই তো
একাকী, নক্ষত্রের সাথে যাহা কিছু কথোপকথন, নদীর তরঙ্গমালার সাথে যাহা কিছু
সব ফিসফিস, অস্ফুট, সমস্ত চিৎকার আজ অর্থহীন, সমস্ত অঙ্গভঙ্গি, ক্যারিকেচার—
অর্থহীন, আজ শুধু মাথা নিচু, শুধু কদমবুসি
…
সম্পূর্ণ
এক না-এর সামনে দাঁড়াইয়া এই পাহাড়ের টঙ, তাহার মাথায় চড়িয়া
এক নকিব ঘোষণা দিতেছে কেহ শুনিবে-না জানিয়াও, কেউ ভালোবাসিবে-না
জানিয়াও যেভাবে বাঁশিতে সুর তুলে একাকী মেষপালক, সুর হারাইয়া যায়
এই মুহূর্তের, সুর হারাইয়া যায় চিরকালের, সকাল বিকাল রাত্রি, সকাল
বিকাল রাত্রি, পৃথিবী ঘুরিতেই থাকে, সমস্ত যাত্রাই কি তবে শেষ যাত্রা?
তুমুল বালিঝড়ের ঝাপটা আসিয়া লাগিতেছে কেবলই, মাথা নিচু করিয়া
চলিতেছে মরিয়া উট, মাথা নিচু করিয়া চলিতেছে তাহার একগুঁয়ে সওয়ার
এই দহনের ভিতর দিয়া কোথায় গিয়া পৌঁছাইবে তাহারা, উষ্ণতার ঘোর
তবু ভুলাইয়া দেয় জন্ম মৃত্যুর গাথা, সমস্ত যাত্রাই বুঝি শেষ যাত্রা, তবু যাইতে
হয় বারবার, ঝরিয়া-পড়া মাংস আর গলিয়া-যাওয়া হাড্ডি হাতে লইয়া, অর্ঘ্যের
মতো, কাঁপিতে-থাকা মোমবাতির মতো, যাইতে যাইতে সম্পূর্ণ ধ্বংস হইয়া
যাইবে – এই কথা জানিয়া, ওই যে লাফাইয়া উঠিতেছে সিন্ধুনুন ফেনা, ওই
যে আছড়াইয়া পড়িতেছে ঢেউ ফসফরাস, এক ধ্বংস হইতে আরেক ধ্বংসের
দিকে, এক পিঞ্জর ভাঙিয়া ফেলিয়া আরেক পিঞ্জরের দিকে, মাঝের এই উদ্দাম
উড়াল, এই অপ্রতিহত উড়াল
…
কিছুই
সামান্য নয়, বাক্যমধ্যে যেমন একটি ছোট্ট অর্ধযতি, অন্ধকারের ভিতর
দিয়া ভাসিয়া-আসা একটি সান্দ্র প্রস্বর, অপলক একটি পলক, অস্ফুট একটি
অতিশয়োক্তি, সকলই অসামান্য, বিশাল অন্ধকার মহাশূন্যে এই খুকি গ্রহটি
কত সামান্য, বিশাল অন্ধকার মহাশূন্যে এই খুকি গ্রহটি কত অসামান্য, বৃষ্টির
আগের বৃষ্টির সময়ের আর বৃষ্টির পরের ঘ্রাণে কত তারতম্য, যখন বৃষ্টি থাকে
না, এই ঘ্রাণগুলি কই যায়, তাহারা কি ভূগর্ভেই লুকাইয়া থাকে, না স্মৃতির
অগম পারে? তাহার পর দেশ দেশান্তর হইতে মেঘ ভাসিয়া আসে একদিন
এলোমেলো বাতাস ভাসিয়া আসে উপকূল হইতে, ভাসিয়া আসে ঘ্রাণ, ভাসিয়া
আসে স্মৃতি, কিছুই সামান্য নয়
…
মাকড়সার
জাল কি একটি আবাসন, না একটি ফাঁদ, না কি দুইই একসাথে? সে
যাহাই হউক, তাহার একটি জ্যামিতি রহিয়াছে, একটা সৌকর্য রহিয়াছে, তাহা হইলে
জ্যামিতির সহিত নিষ্ঠুরতার কোনও বিরোধ নাই! ভয়ঙ্কর এক কেন্দ্র হইতে পরিচালিত
ব্যবস্থাপনার সহিত সৌন্দর্যের কোনও বিরোধ নাই! এই শ্বাসরোধী
সৌন্দর্য
হইতে আজ মুক্তি খুঁজিয়া লইতে চায় বাক্য, সমস্ত পরিকল্পনা ও
জ্যামিতির বাহিরে, সমস্ত কেন্দ্র ও রাষ্ট্রের বাহিরে মুক্তি, আজ বন্দিদের মুক্তি
চাই, সকল বাক্যের চিন্তার প্রেমের মনীষার মুক্তি চাই, ঘ্রাণের মুক্তি চাই, উফ্
সেই ঘ্রাণ, সেই সামান্য ঘ্রাণ, যাহা ছুটিয়া আসিতেছে সিরিয়ার রান্নাঘর হইতে
গাজার গানের ইস্কুল হইতে, কাশ্মীরের আপেলবাগান হইতে, সুদান কঙ্গো
এমন কি পারি বা লস এঞ্জেলস হইতে, ফুলে ফুলে ভরিয়া গিয়াছে চারিদিকের
বাতাস, ফুলের জ্যোৎস্নায় ঢাকিয়া গিয়াছে চারিদিকের রাত্রি, এ এক গ্রহান্তরের
মাটি, গ্রহান্তরের মাটিতে পথ হাঁটিতেছে একাকী পথিক, প্রতিটি পথই ভয়ঙ্কর
প্রতিটি পথই আবিষ্কারের জন্য পড়িয়া আছে
পাতক
তোমার
সঙ্গে আমার কোনও যুদ্ধটুদ্ধের কথা ছিল না
তবুও
তুমি হটাৎ ক'রে
মাঠের
মধ্যে নিজেই একটা ছোট্টখাট্ট শিবির গড়লে
আমায়
দিলে সামনাসামনি দাঁড় করিয়ে
এবং
একটা জবরদস্ত বর্ম দিলে গায়ে পরিয়ে
ঝিকিয়ে
ওঠা অস্ত্রশস্ত্র হাতের মুঠোয় ধরিয়ে দিয়ে
বললে
এবার যুদ্ধ করো
কিন্তু
তুমি ভালোই জানতে , অমন একটা যুদ্ধে আঁটা
আমি
তো ছার
স্বয়ং
পার্থসারথিরও মুরোদ নেই
বাধ্য
হয়ে বলেই ফেল্লাম : সন্ধি সন্ধি
অল্প
হেসে তুমি বললে :
আত্মসমর্পণের
রীতি এ যুদ্ধে নেই , আঘাত করো
এই
যে আমার অনাবৃত হৃদয়রেখা
যুদ্ধ
বিনা ছাড়ব না এক ইঞ্চি জমি এখান থেকে
তখন
দ্বিধায় এবং একটু অধৈর্যতে
উঠল
আমার আমুণ্ডুপা থরথরিয়ে
ধাঁ
করে এক জঙ্গি কুঠার অনভ্যস্ত মুঠোয় নিতেই
হায়
ঈশ্বর , হাসলে তুমি
এবং
পারম্পর্য রেখে আমি ভীষণ অন্ধ হলাম
হাতের
থেকে এক লহমায় ছিটকে গেল সে- হন্তারক
বাতাস
নদী বসুন্ধরা
সমস্বরে
চেঁচিয়ে উঠল : হায় কী পাতক হায় কী পাতক
চোখ
মেলতে সামনে দেখি
কোথায়
তুমি , কোথায় তোমার ঢাল তলোয়ার যুদ্ধশিবির
উধাও
ধুধু মাঠের মধ্যে টলটলাচ্ছে
একলা
একটা রক্তগোলাপ
সামনে
আকাশ আর চরাচর - আমিই সাক্ষী আমিই সাক্ষী
বৃক্ষতম
০১
সমস্ত বৃক্ষের
মর্মে চিরদিন তোমাকে খুঁজেছি বৃক্ষতম
সমস্ত মেঘের পুঞ্জে তোমাকেই, বৃষ্টিঘোর প্রার্থনার মেঘ
সমস্ত নদীর গর্ভে তুমি স্বচ্ছ উতরোল সমুদ্রসংকেত
রাত্রির আড়ালে রাত্রি তুমি মহানিশীথের অলঙ্ঘ্য ব্যঞ্জনা
পথের জটিল লাস্য
ছুঁয়ে দেখি তুমি দূর ছায়াপথিকের
আলোর গভীরে তুমি অন্ধকার হরিণের জ্বলে ওঠা চোখ
চিরবিষাদের রক্তে বেড়ে ওঠ তুমি তীব্র সুরকাতরতা
তুমিই চূড়ান্ত হর্ষ অফুরন্ত থরো থরো সিঁড়ির কিনারে
বাক্যের
ইঙ্গিতগুলি নিভে এলে জ্বলে ওঠে তোমার ইশারা
সব অগ্নি তুচ্ছ, তুমি ক্ষমাহীন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ দাবানল
সমস্ত জাগর দৃশ্যে তোমাকেই খুঁজে গেছি চিরজাগরণ
ঘুম শেষ হ’লে তুমি নিয়ে চলো অন্তিমের আরও গাঢ় ঘুমে
০২
তুমি তো তরল নও,
তবু দেখি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মদ তুমি
যত পান করি তত অগ্নিভারে দাউ দাউ জ্বলে ওঠে স্নায়ু
শ্বেতাশ্ব ছুটেছে তীব্র মেঘে মেঘে আমি তার নির্মম সওয়ার
অস্ত্রের ঝিলিকে ভেঙে টুকরো হয়ে ঝ’রে যায় বধির আকাশ
কোন যুদ্ধে যেতে
হবে বলো তবে, মর্মরিত রক্তের নিশান
হাওয়ায় দুলেছে, আর অন্তহীন মেরুদাঁড়া হয়েছে মাস্তুল
ভেসেছে নাবিক, ঘোর ঊর্মির রহস্যে ঢাকা দ্বীপান্তর তুমি
লবণের ঘন গন্ধে রাত্রি-ফসফরাসে হাসে মায়াবী দু’চোখ
নিয়ে এসো
নাস্তাপানি, আজ আমি হলায়ুধ অদম্য কৃষাণ
অশ্রুতে করেছি নম্র এঁটেলের বজ্রটান, ধূলিস্নানে মজে
এবার ছড়াব বীজ কীর্তনের বাউলের, আউলা হয়ে নাচে
মেতে উঠব তালে তালে শিস দেবে এ-বাংলার রঙ্গিলা পাখিরা
০৩
ডুবুরির মতো আমি
নেমে যাই জলের সুরঙ্গ খুঁড়ে খুঁড়ে
শিরস্ত্রাণ থেকে আলো ঠিকরে প’ড়ে ছিঁড়ে যায় পাথরের পথ
জলও কঠিন জেন’ – দুর্বিনীত, অভিশপ্ত, ঘন অন্ধকার
কেবলই দোলায় আর টান মারে মৃত নক্ষত্রের কালো বুকে
দিই ঝাঁপ প্রতি
রাত্রে, কটিবন্ধে বাঁধা আছে অদৃশ্য রজ্জুর
সোনালি চুম্বকরেখা, অন্যপ্রান্তে কেউ কেবলই পাঠায় বার্তা –
তুলে আনো তুলে আনো মুঠো ভরে, ওগো প্রিয় ডুবুরি আমার
জলজ গাছের চারা, মাছের কঙ্কাল স্পঞ্জ কড়ি শঙ্খ নুড়ি
হয়তো সাজাব ঘর
কোনওদিন ভাঙা কোনও জাহাজের বুকে
হয়তো হারিয়ে যাব নীল স্রোতে লবণের গভীর দ্রবণে
আজ শুধু নাচে ঢেউ, রুপোলি আঁশের মতো জ্বলে ওঠে চাঁদ
আর কোনও শ্রান্তি নেই ক্ষান্তি নেই, শুধু তুমি, সমুদ্র অপার
০৪
কুড়িয়ে এনেছি আজ ভাঙা
ব্যাঞ্জো আশ্বিনের বর্জ্যস্তূপ থেকে
ডুবসাঁতারের ছলে যে কেবল তারাখসা জলের পাতালে
ঘুমিয়ে পড়েছে আর পৃথিবীর দৃষ্টিহীন কক্ষপথ ছিঁড়ে
কেবলই গিয়েছে সরে একা একা কল্পনার চিরনির্বাসনে
ধাতুর কঙ্কাল ঘিরে
সবুজ চকমকি যেন উদ্ভিদের ক্ষুধা
তুচ্ছতম শরীরের গোপন বার্তার মতো, অসহ্য সংকেত
বয়ে যেত দিগন্তের পারাপারহীন কোনও পোড়ো আস্তাবলে
আর সেই উতরোল
স্বপ্নের ঝটিকাকেন্দ্রে তুমি বসে একা
ঝংকার তুলেছ তারে, ধমনীর মহান প্লাবনে ভেসে ভেসে
ছড়িয়ে পড়েছে সুর সপ্তডিঙা নাবিকের ঘুমন্ত বন্দরে
সেই মহানিদ্রাঘোর
রাক্ষসের কানে কানে আজ গিয়ে বলি
সময় হয়েছে দ্যাখো, মাতৃভাষা ফুটে ওঠে পাথরের ঠোঁটে
উঠে আসে রাঙা ব্যাঞ্জো ক্ষতস্থানে আজও উষ্ণ রক্তের প্রলেপ
জঠরের সাতপাকে হাসে অগ্নি, মহাকাল ছুঁয়ে আছে মুঠি
০৫
আমাকে প্রশ্রয় দাও
হে তমসা, অনিঃশ্বাস কবরের ঘোরে
শৃঙ্খলে বেঁধেছি আত্মা, অভিশপ্ত জাদুকর যেন ভুলে গেছে
সমাধিগহ্বর থেকে ধীর পায়ে উঠে আসতে গুপ্ত সিঁড়ি বেয়ে
মঞ্চের অশ্রাব্য আলো করতালি তাকে জেন’ ফেরাতে পারে নি
চোখের তারায় আজ
ঝুঁকে পড়ে দ্যাখ’ যদি সহসা ঘূর্ণন
ভ্রূকুটিতে দ্যাখ’ মেঘ আঙুলের ভাঁজে দ্যাখ’ গোপন টঙ্কার
যদি দ্যাখ’ বাহুমূল দিগন্ত-আঁধার থেকে সমূহ উদ্যত
যদি ওষ্ঠ নড়ে উঠে ভিক্ষুকের মতো চায় করুণ চুম্বন
বোলো না সংযত হতে
হে তমসা, খরজ্যৈষ্ঠে মায়ার কাজল
বিগত জন্মের মতো নিষ্ঠুর হয়ো না আর ফিরিয়ো না চোখ
সিন্ধুরোল ভেঙে যদি দ্বীপান্তরে ভেসে এলে গোধূলি মান্দাস
শ্যামল আভায় তবে তুলে নাও ছিন্নমূল কররেখাগুলি
০৬
দু’হাতে প্রাচীর
গাঁথি এসো আজ হৃদয়ের অন্ধকূপ ঘিরে
পাথরে ঢেকে দি’ চোখ, শ্বাসবায়ু, অতলান্তে পড়ে থাকা জল
যাতে কোনও আচম্বিত ঢেউ এসে ফণা তুলতে না-পারে কখনও
যাতে মহাশূন্য থেকে ভেসে আসা আর্ত কোনও নক্ষত্র-ইশারা
তোলপাড় না-তোলে এই শ্বাসরুদ্ধ মনীষার দুর্বল সঞ্চয়ে
এসো আজ মুছে দিই
ধমনীর চিত্রপট, রঙের পিপাসা
মুছে দি’ লবণপথ, বনরাজি, শ্রাবণের মেঘে মেঘে ফেরা
মুছি বাক্য, যতিচিহ্ন, হরফের ধ্বনিহীন আর্ত হাহাকার
মুছি প্রণামের ডানা, করতল, থরো থরো ঠোঁটের বিভাষা
নিজেকেই মুছি যেন অনুলেখা কবরের পাথর ফলকে
***** জার্নাল ছিয়াত্তর
বরাবরই তো এরকম ভীতু
তুমি
তবু কি আশ্চর্য ,
ইতিহাস নিয়ে তুমিও ভাবতে বসেছিলে একদিন
মুর্খের মতো
স্বপ্ন দেখেছিলে তিনশো মুক্ত গ্রামের
তারপর এগিয়ে এল
তিনহাজার কালো ভ্যান
তোমার বন্ধুদের
হলদে লাশ পড়ে রইল ভ্রূক্ষেপহীন রাস্তায়
তুমি ভুলে গেলে ,
দ্রুত ভুলে গেলে , তোমার প্রিয় কোটেশন
ভুলতে ভুলতে খটখট
করে শিখে ফেললে টাইপ
ছেঁড়া জুতোয় কালি
লাগিয়ে দিয়ে এলে ইন্টারভিউ
এখন রোজ হুড়োহুড়ি
করে তুমি ঢুকে পড় কংক্রিটের একটা ঠান্ডা জঙ্গলে
যেখানে সারাক্ষণ
তোমার সামনে ঝুলে থাকে
বড়বাবুর ভল্লুকের
মতো লম্বাটে মুখ
আলস্যে হাই তুলতে
তুলতে তুমি ঝাড়তে থাক ফাইলের ধুলো
তোমার চোখের সামনে
কবির ছেলে কবি হয়ে যায়
প্রধানমন্ত্রীর
ছেলে প্রধানমন্ত্রী
তুমি ফিরে আস
তোমার ছোট্ট গর্তে
শিরদাঁড়া ভাঙা
সাপের মতো
পাথরের চোখে নেমে
আসে লম্বা ঘুম
আরশোলার মতো
দুমিনিট উড়তে থাকে স্বপ্ন
তারপর মুখ থুবড়ে
পড়ে যায় দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে - নিচে
একেবারে নিচে -
খাদের অন্ধকারে
******
বিপরীতের মধ্যে ঐক্যের সূত্রটি যেন কী ছিল
আকাশ গুমগুম করিতেছে, কিন্তু
কোনও ধ্বনি শুনা যাইতেছে না, অন্ধকারের রঙ ঠিক সেইরকম, যখন কাক উড়িয়া গেলে দেখা
যায় কিন্তু গাছের পাতার সবুজ আর ঘাসের সবুজ এ উহার গায়ে মিশিয়া যাইতেছে, ঠিক
সেইরকম. যাহাতে টের পাওয়া যাইতেছে না একটু পরেই সন্ধ্যা নামিবে না কি বেলা দশটার
আকাশ জুড়িয়া মেঘের গন্ধ, ফড়িং উড়িতেছে, লোকজন আসিল আসিল বলিয়া জলদ পায়ে দৌড়
লাগাইতেছে, কষ্টটিকে কষ্ট বলিয়া চিনিতে দেওয়া ভালো, উড়ন্ত বাঘের মতো লাফ দিল প্রথম
প্রহরী, পাথর ফাটিবার শব্দ হইল কি এইবার, পাথর না মেঘ, বাচককে অনেক দিন অপেক্ষা
করিতে হইয়াছিল গলা দিয়া ঠিকঠাক আওয়াজ বাহির করিবার জন্য, পাখিদের হাজার হাজার মাইল
উড়িয়া যাওয়ার মধ্যে কী সাধনা আছে কে জানে, আর অত ঢাউস একটি তিমি স্রেফ প্লাস্টিক
গিলিয়া মরিয়া গেল, ইহা তো ঠাণ্ডা মাথায় খুন, অথচ কেহ কাহাকেও ফাঁসিতে লটকাইবে না,
কষ্টটিকে কষ্ট বলিয়া চিনিতে গেলেও একটা ধ্যান লাগে, অত সময় কই
…
সময়
নাই সময় নাই বলিয়া একটি গাঢ় মন্থর ট্রেন চলিয়া যায়, লম্বা বিবর্ণ এক মালগাড়ি, দুধ
ও তেল লোহা ও কয়লা গরু-মহিষ – সব কিছু পেটে পুরিয়া সে চলিয়াছে মাইলের পর মাইল,
যুদ্ধ চলিলে যুদ্ধবন্দিদেরও লইয়া চলিত, এইভাবেই, সময় নাই সময় নাই বলিতে বলিতে,
আসলে অবশ্য মালগাড়ি কিছুই বলিতেছে না, কোনও ট্রেনই কিছু বলে না, শ্রোতা যেমন শুনিতে
চায় তেমনই বলে, কিন্তু শ্রোতা কী শুনিতে চায় সে টের পায় কীভাবে? সকলই শ্রোতার
কুদরতি, যাহা সে শুনিতে চাহিবে তাহাই শুনিবে, তাহা হইলে কি অন্য কিছু বলিবার কোনও
সুযোগ নাই? অপর কিছু? এক লাইন হইতে আর এক লাইনে গিয়া পড়িবার সময় কর্কশ আওয়াজ
তুলিতে তুলিতে ভাবে রেলগাড়ি, সিমেন্ট-বালি-পাথর লোহা-কয়লা-তেল গরু-ভেড়া-উট –
ভাবিতে থাকে সকলেই, সুযোগ নাই সুযোগ নাই? যুদ্ধবন্দিরাও ভাবে, মালগাড়িতে থাকুক
না-থাকুক, শত শত অন্ধকার কুঠুরিতে কুঠুরিতে বসিয়া ভাবে – অন্য কিছু? অপর কিছু?
…
এত
বুঝাইয়া বলিবার কী আছে, বকা লাগায় ফকির, তাহার ধুনি হইতে সুগন্ধী ধোঁয়া বাহির
হইতেছে, শান্ত মসৃণ ধোঁয়াগুলি এ উহার গায়ে পড়িয়া কুণ্ডলী পাকাইয়া ক্রমেই ঢাকিয়া
দিতেছে মনোহর দাড়ি শাহি গোঁফ, অস্পষ্ট হইয়া উঠিতেছে তাহার ধমক তাহার মুখ, বুঝাইবার
কিছু নাই, সকলই স্পষ্ট, বাংলায় যাহাকে স্বচ্ছ বলে, ডুবসাঁতার দিয়া গভীরে তলাইয়া
গেলেও সকলই দৃশ্যমান, আড়াল বলিয়া কিছু নাই, যে যেখানেই যাহা করুক সকলই দৃশ্যমান,
যে বলিতে অবশ্য এখানে প্রকৃতিপুঞ্জের কথা, যাহারা প্রাকৃত ভাষায় কথা বলে,
রাজারাজড়াদের আড়াল ভাঙিবে কে, সমস্ত গোপনীয়তা তাঁহাদের, সকল স্বাধীনতা তাঁহাদের,
স্বাধীনতাহীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কেহই চায় না, যাহারা বাঁচিয়া নাই তাহাদের আবার
আজাদির কথা উঠিতেছে কেন, তাহাদের লইয়া ঘনঘোর ভৌতিক কাহিনি ফাঁদিবার কথা ভাবিয়া
দেখা যাইতে পারে, ধুনির ধোঁয়ায় মাথা ভরিয়া উঠিলে কাহিনি জমিবে ভালো
…
আকাশে
কত না মেঘ ভাসিয়া বেড়াইতেছে, সবার সাথে কি সবার মোলাকাত হয়, মোলাকাত হইলেও হয়তো
আড়ে আড়ে তাকাইয়া পাশ কাটাইয়া চলিয়া যায়, কদাচিৎ এ উহাকে স্পর্শ করে, জড়াইয়া ধরে, এ
উহার গায়ে বৃষ্টি হইয়া ঝরিয়া যায়, মনেরই মতো, মনের মতো দুর্বোধ্য আর কী আছে, যে
নিজেই নিজের দিশা পায় না, অন্য মন তাহার ভিতর নিজের প্রতিধ্বনি শুনিবে কীভাবে, শত
শত মনকে ঘিরিয়া আছে শত শত মন, কে কাঁহাতক কাহার হদিশ রাখিবে, কী যে ক্লান্তিকর কাজ
এই গোয়েন্দাগিরি, তবু কী যে এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে এক মনকে পড়িতে বসে আরেক মন,
তাহাকে বিশ্লেষণ করে, তন্ন তন্ন করিয়া রপ্ত করে, কোনও মন এইসব কিছুই করে না,
আপ্লুত হয়, সে বুঝি আর নিজেকেও বুঝিতে চাহে না, একটি সমর্পণের ভিতর দিয়া কেবলই
নির্ভার হইতে চায়, বৃষ্টি চায়, বৃষ্টি হইতে চায় মন
…
পাহাড়ি
পথে চলাফিরা করিবার হাজার ঝক্কি, কখন কোথায় ধ্বস নামিবে কে বলিতে পারে, পাথর
গড়াইয়া ঘাড়ের উপর পড়িলে তো দফা রফা, নহিলে নির্ঘাত রাস্তা বন্ধ, তখন ধুত্তোর বলিয়া
ফিরিয়া আসিতে গিয়া দেখা গেল সেদিকেও ধ্বস, রাস্তা সাফ হওয়া ইস্তক আটকাইয়া থাকা
বিনা আর উপায় কী! আটকাইয়াই যখন পড়িতে হইল, সামনের দিকে চলাই ভালো, সামনের দিক
বলিয়া অবশ্য কিছু নাই, ঘুরিয়া ঘুরিয়া পাক খাইয়া খাইয়া আগাইয়া যাওয়া, পথকে সঙ্গ
দিতেছে থাকে থাকে নামিয়া-উঠিয়া-যাওয়া অনেক গাছ, অনেক ফুল ও প্রজাপতি, বাঁকে বাঁকে
গর্জন করিয়া বহিয়া যাওয়া নদী, পাথরে পাথরে সাঁটিয়া-থাকা শ্যাওলা মশ ফার্ন আর আড়াল
আবডালের পাখি, সামনের গাছের ডালে জবুথবু হইয়া বসিয়া থাকা ওই পাখিটির কথা শুনিয়া
লওয়া যাক এই ফাঁকে, বৃষ্টিতে তুমুল ভিজিয়া তাহার মনে হইতেছে উড়িবার শক্তি নাই আর,
গাছের কোটরে বসিয়া ডানা ঝাড়িয়া ঝাড়িয়া শরীর একটু শুকাইয়াছে বটে, কিন্তু আবার যদি
বৃষ্টি নামে, তাই আর উড়িয়া কাজ নাই, পাখির কথা শুনিতে শুনিতে রাস্তার মেরামতি
এদিকে প্রায় শেষ, মনে হয় এইবার আবার যানবাহন চলিতে শুরু করিবে, আগানো যাক
…
লবণপানির
ভিতর দিয়া তড়িৎপ্রবাহ চালাইলে, বারবার একই অম্ল আর ক্ষার উদ্গত হয়, তাই বলিয়া
জীবনে অমন বারংবারতা ফিরিয়া ফিরিয়া আসে নাকি থোড়াই? রাস্তা প্রতিদিন লোপাট হইয়া
যায়, আদৌ কোনও রাস্তা যে কোনওদিনও ছিল, কে হদিশ দিবে তাহার, প্রতিদিনই নতুন করিয়া
দিকনির্ণয়, ঝোপঝাড় খানাখন্দ ভেদিয়া অন্ধ হামাগুড়ি, সে কি এক ধ্যান, সে কি শুধু
নির্মাণশ্রমিকতা, হা হা, শব্দের ভিতর কত ইতর বিশেষ, কত একতলা দোতলা, যেন কূর্ম বহন
করিতেছে পৃথিবী, অভ্যাসে আনন্দ নাই, আনন্দেরও অভ্যাস হয় নাকি! বিপরীতের মধ্যে
ঐক্যের সূত্রটি যেন কী ছিল
…
কষ্টের
প্রদর্শনী দিয়া সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা এক স্থূল ব্যাপার, কিন্তু কষ্টকে লাগে,
তাই তাহাকে চিনিতেও লাগে, তবে বন্ধ কামরার ভিতর নয়, তাহাকে লইয়া বাহির হইতে হয়
ভোরের আলো ফুটিবার ঠিক আগে খুব চুপি চুপি, মানুষের শব্দ শুরু হয় নাই বলিয়া পাখিরা
সরব, তাহারা পৌঁছাইয়া দিতেছে জন্মান্তরের সংগীত, বাতাসে মেঘের ঘ্রাণ, ইহা একটি
সমাপ্তিরও বিন্দু হইতে পারে, বা শুশ্রূষার…
*******
কলম্বাসের জাহাজ
হিংস্র
বাজপাখির মতো দ্রুত নেমে আসছে অন্ধকার
ঐ
দ্যাখো , ফোম-চামড়ার মতো জল ঝরে পড়ছে
তার
গাঢ় বেগুনি পালক
হাওয়া
এসে অন্ধ দৈত্যের মতো লাফিয়ে পড়ছে পালে
ফুলে
উঠছে পেট
নিধুবনের
গূঢ়তায় কেঁপে উঠছে তার ধুমসো শরীর
কতদিন
, ও: কতদিন আমরা ছেড়ে এসেছি আমাদের দেশ
সেই
লাল গমের গরম রুটি দাঁতে কাটিনি কতদিন
গনগনে
উনুনের আঁচে বসে বুড়ি মা আমার
বিড়বিড়
করে কি গান গাইছ তুমি
খাঁচায়
ভরা আমার দুষ্টু হিরেমন , আমার নদীর ধারের ভাঙা গির্জাটি -
কেমন
আছে নাদিয়া , নাদিয়া আমার
দিনের
পর দিন বাসি মাংস আর তেতো মদ গিলতে গিলতে
জ্বলে
গেছে আমাদের জিভ
লোনা
হাওয়ায় জং ধরে গেছে আমাদের ভোজালি
অথচ
সেদিনও
কি
উল্লাসে আমরা বিঁধিয়ে দিলাম আমাদের উজ্জ্বল হারপুন
এক
ঝাঁক গভীর হাঙরের বুকে
লাল
হয়ে উঠল জল
বুড়ো
তিমি ছুড়তে লাগল তার শান্ত ফোয়ারা
আজ
কিন্তু ফুরিয়ে গেছে আমাদের রুটি আর রামের বোতল
ছিঁড়ে
ন্যাতা হয়ে গেছে আমাদের নীল ট্রাউজার
লম্বা
চুলে বিজবিজ করছে দু'লক্ষ উকুন
আর
নয়
ক্যাপ্টেন
, আর কত দূরে তুমি নিয়ে যাবে আমাদের
বলো
, আর কতদূরে তোমার স্বর্গ - তোমার স্বপ্নের সেই
ইন্ডিয়া
********
তুমি আর আমি
১.
তোমার সঙ্গে যে দেখা হয়ে যাবে আবার
সে আমি ভালোই জানতাম
ইচ্ছে গো ইচ্ছে, সবটাই হল ইচ্ছে
নইলে তো নদীর এপার আর ওপার
সাঁকো বলতেও, ফুস মন্তর
তবুও চলে যাই কোথায় কোথায়, ঘুরে বেড়াই আদাড় বাদাড়
তুমিও কি ছাই বসে থাক নাকি ঘরের কোণে
আলপনা দেওয়া জলচৌকিতে আসনপিঁড়ি হয়ে?
থাকবেই বা কেন, তোমার কি বয়সধর্ম বলে কিছু নেই
তবে, জোসনার মধ্যে এখনও হঠাৎ হঠাৎ কাক ডেকে ওঠে
আর, কী কী সব মনে পড়ে যায়
সেবার সামরিক আদালতে বিচারের পর ফাঁসি হয়ে গেল আমার
আর তোমাকে হাসির গান গেয়ে বেড়াতে হল লোক-উৎসবে
২.
সত্যি কথা কি কেউ বিশ্বাস করে
শুনতেই চায় না
তুমিও তেমনই, কোনও দিন সাপকে সাপ বলা পছন্দ করলে না
বলতে হবে, কালো পাথরের ঘনক
বা, ছিটকে যাওয়া ঘোড়ার গাড়ির চাকা
নক্ষত্রদের ভিতর দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে যেসব ধুলো গায়ে এসে লাগে
তার কাছে কোথায় লাগে তোমার সুগন্ধ মেশানো সাজিমাটি
তুমি কি ভাব এসব খবর এদিকে এসে পৌঁছায় না
সকলেই বুদ্ধি ধরে
নাহলে কি আর একত্রিশ জন মিলে একশ জনকে চালাতে পারত
তুমিও তো ওইভাবে চালাতে পারতে আমায়
স্লেজগাড়ি চড়ে আমিও দিব্যি গড়গড় ক’রে চলে আসতাম
বরফবিজ্ঞানীদের অধিবেশনে
৩.
একটি শব্দের পর অনেকখানি শূন্যতা
তারপর আবার একটি শব্দ
এইভাবেই নাকি প্রত্যাদেশ আসে
এব্যাপারে তোমার সাক্ষ্যই অবশ্য শেষ কথা
আমার মন চঞ্চল
পুংবিপ্লবীদের হাতে সরলা দেবীর হেনস্থার কথা ভাবি
জানি, তুমি নির্ঘাত বলবে
হাজার হাজার মাইল উড়ে আসা পাখিগুলির কথা
এই লম্বা রাস্তার নিশানা ওদের কে দেখায়
হয়তো ডিমের মধ্যেই চুপিসাড়ে সব নির্দেশ লিখে রাখে
ওদের মা
তুমিও কি অমন কিছু পার না
যাতে হাঁ ক’রে তাকিয়ে থাকতে না হয়
কলকব্জাগুলো নড়তে চড়তে থাকে যুক্তিহীনভাবে
৪.
আমি তো পৌঁছাতেই চাই
মাঠের কোণের বটগাছের নিচে চুপ ক’রে বসে বসে ভাবি
কোন পথটা ধরলে ভালো হয়
রাস্তা অবশ্য কোনওটাই সুবিধার নয়
ধিক ধিক ক’রে আগুন জ্বলছে পুড়িয়ে দেওয়া ঘরবাড়িগুলোয়
গাছের ডালে ঝুলছে খোবলানো বাচ্চা মেয়ের লাশ
সেবার লতাপাতা দিয়ে পাহাড়ি নদীর ওপর
যে-ঝুলসেতুটা বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিলে
অযত্নে অযত্নে ঝরে গেছে সেটা
বলব কী, পাহাড়টাই ভেঙে পড়েছে নদীর ওপর
কিন্তু এতসব ঝামেলা টপকে যখন গিয়েছি যথাস্থানে
দেখেছি, তুমি নাই
এবার ভাবছি উড়াল দেওয়ার কথা
ভাবছি, গাছের নিচে চোখ বন্ধ ক’রে বসি
আর, মনে মনে সব রাস্তা পেরিয়ে সোজা চলে যাই
এক্কেবারে ঠিক যেখানটায় তুমি আছ, সেইখানে
৫.
তুমি কি খেয়াল করেছ, রেলপথ প্রতিবার বাঁক নেওয়ার আগে
কোণ আর ব্যাসার্ধের মাপ লিখে লিখে রাখে
তোমার অবশ্য সেসব দায় নেই
জানি, যেসব কথা বলা হল এতদিন
অনেক ফাঁকফোকর রয়ে গেছে তার ভেতর
তা নিয়ে মুষড়ে পড়ে আর কী হবে
তুমি তো বলেছিলে, ব্যথার ওষুধ বেশি না-খাওয়াই ভালো
খেলে, পাকস্থলী ছেঁদা হয়ে যেতে পারে
তার চেয়ে, ছটফট করতে করতেই ভোর হবে
শুকতারা ফুটে উঠবে, মিলিয়েও যাবে আলোর চৈচৈ ভিড়ে
'বাক'-এ প্রথম প্রকাশ নিমিত্তে নতুন কবিতা ...
আরবচৈত্রের দিন (অংশ)
ভাবিতে হয় একটি ঝাপসা পুঁথির কথা, ফাটিয়া যাওয়া বুদ্বুদ
বালিকে ঘিরিয়া থাকে দরিয়া ও পাহাড়, নগ্ন উভয়েই
পাকাইয়া উঠে রৌদ্র উটের কুঁজ, যাত্রার বিড়ম্বনা ও অদম্যতা
মৃত্যু এক মন্থর নির্মাণ, পূর্ণ প্রতিফলন, সত্য আর বিলকুল ভঙ্গুর
***
অ-বধির, তাই কৃতজ্ঞতা। অনন্ধ, সেজন্যও। হাত পাতিবে না কেহ
তবু, ধুলাবালি কাঠকুটা আঁখিজল কিছু তো কুড়াবার, মুঠি ভরিবার
এইটুকু ফিরাবার জন্য থাকুক অন্তত, মন কি কাঁদে না, শুধু কি পাথর
কান পাতিবার জল, ধ্বনিমাত্র, ছায়া, তাই থাক, স্বপ্নে, সামান্য নির্মাণ
***
ভাবনা দরিদ্র, ভাষা ঠগিনী, টোপে গাঁথা কেঁচো কাঁপে, জল মায়াবী
হাঁসুলির মতো বাঁকানো তার এখুনি বিঁধিবে কণ্ঠে, দমন করিবে কে
স্বরধ্বনিপ্রবণ আয়োজনের চতুরালি বুঝা কঠিন, সাঁতার সর্বদা সর্পিল
চরিত্রগুলি নিছক মনগড়া, সুরের পাল্লায় পড়িলেই লহমায় দফারফা
***
দমবন্ধ কাচের বাক্সে অজানা পৃষ্ঠাগুলি নুড়িচাপা, বাতাসহীন
নাগিনী, গান গাহিলে ঘুমাইবে, না অস্ত্রের ঝনঝনায়, সেই তর্কে সময়
সে জাগুক – কেউ কি বলে না! হইতেও তো পারে ছদ্মবেশধারী
হইতে পারে দড়ি লাঠি কাঠকয়লা আঁকিবুকি দুর্জ্ঞেয় পাঠ, নিস্পৃহ পড়ুয়া
***
শেষ করছি গৌতম চৌধুরীকে 'এই সংখ্যার কবি' হিসাবে
উপস্থাপন করতে বসে অন্তরমহলে অসংখ্য বার জেগে ওঠা কথাগুলোর মোটামুটি একটা সারসংক্ষেপ
বা ধারনা দিয়ে , আয়না মনে হলে বিস্ময়ের কারন নেই ...
"আমাদের দেশে যুগে-যুগে "তারকা"
জন্মায় । কিনা , স্টার । জন্মাতে- জন্মাতে , বা তার আগেও , তারা ঝ'রে যায় , আমাদের
মর্মমূলে জ্যান্ত সিগারেট চেপে দিয়ে । আমাদের জ্বলুনি থামেনা , আহা সুকান্ত যদি
বাচ্চা বয়সে ম'রে না যেত , যদি বিনয়ের মাথাটা অমন ...... যদি আবুল হাসান .......
ইত্যাদি । এইসকল চোখের সামনে উঁচিয়ে-ধরা মুঠিগুলোর আড়ালে আবার দুই-একটা পাহাড় উঁচু
থেকে উঁচু হয়ে উঠেই চলে ; কিন্তু যেন পণ ক'রে বসেছে সবাই , তাদের দেখবে-ই না ব'লে
। তাদের ওজনটা অবশ্য এই ধরিত্রীমাতার বুকে চিরবহাল থেকে যায় । গৌতম চৌধুরী এই
শেষোক্ত শ্রেণীর লিখিয়ে । প্রায় হর-বইয়েতে নিজেকে কতভাবেই যে খেলাচ্ছেন , প্রতিভার
কতদিকের দরজাই যে খুলে চলেছেন , আমরা , যারা তাঁর মুষ্টিমেয় পাঠক , অবাক বিস্ময়ে
দেখে যাই । অ-বাকই বটে । তাঁকে নিয়ে কিছু লেখবার প্ররোচনা আমাদের আসেনা , নিজেদের
ফাঁকা কলস হাটের মাঝে ভাঙবার তাকতও জোটে না ........... খুন্তি হাতে মাওলানা
ভাসানি....... জি , ইনিই গৌচৌ । "
- সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ
-
0 comments:
Post a Comment